বুধবার, মে ৮, ২০২৪
গোটা বিশ্বের সিদ্ধান্ত নেয়ার ভার পাঁচ দেশকে ছেড়ে দেয়া উচিত নয়
গোটা বিশ্বের সিদ্ধান্ত নেয়ার ভার পাঁচটি দেশের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়

গোটা বিশ্বের সিদ্ধান্ত নেয়ার ভার পাঁচ দেশকে ছেড়ে দেয়া উচিত নয়

প্রতিষিদ্ধ ডেস্ক
প্রকাশের সময় : August 31, 2023 | সাহিত্য ও সংস্কৃতি

‘নতুন পৃথিবীর সন্ধানে : ইনসাফভিত্তিক দুনিয়া বিনির্মাণের রূপরেখা’ বইটিতে চলমান বৈশ্বিক সমস্যা, যেমন অন্যায়-অবিচার, দুর্নীতি-বৈষম্য, শরণার্থী সংকট, মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতা, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ ও ইসলামোফোবিয়ার মতো স্পর্শকাতর ইস্যুগুলোকে কীভাবে সমাধান করা যায় সে ব্যাপারে বস্তুনিষ্ঠ আলোচনা করা হয়েছে। 

তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রেজেপ তাইয়্যিপ এরদোয়ান তার এ বইয়ে বিদ্যমান বিশ্বব্যবস্থার গঠনমূলক সমালোচনা করে, একে কীভাবে আরো ন্যায় ও ইনসাফপূর্ণ করা যায় তার একটি রূপরেখা পেশ করেছেন। এ ক্ষেত্রে তিনি জাতিসংঘের সাধারণ সভা ও নিরাপত্তা পরিষদসহ বিশ্ব পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভগুলোকে ঢেলে সাজানোর এবং ক্ষমতার ভারসাম্যপূর্ণ বণ্টনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বৈশ্বিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে পশ্চিমা বিশ্ব ও ইউরোপিয় ইউনিয়নের দ্বিমুখী নীতির বিস্তারিত আলোচনা করে ‘পৃথিবী পাঁচের চেয়ে বড়’ মতবাদের স্বরূপ ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি উদাহরণ দিয়ে দেখিয়েছেন, পাশ্চাত্য বিশ্বের সাজানো অন্যায় ও বৈষম্যপূর্ণ ব্যবস্থা পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাসমূহের কোনো সমাধান দিতে ব্যর্থ হওয়ায় বিশ্বব্যবস্থার ক্ষমতার কেন্দ্র ক্রমেই পাশ্চাত্য থেকে প্রাচ্যের দিকে ঝুঁকছে। তিনি অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে বলেছেন, গোটা বিশ্বকে প্রভাবিত করবে এমন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার শুধু পাঁচটি দেশের করুণার ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। 

আরো দেখুন: সাহিত্যে পৃষ্ঠপোষকতা ও বাণিজ্যিক চাহিদায় বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ আশাব্যঞ্জক নয়

গোটা পৃথিবী যখন অশান্ত, শোকে-তাপে মুহ্যমান, মানুষেরা শান্তির সন্ধানে স্বদেশ ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি দিচ্ছে, ঠিক তখনই আরেকটি ভয়াবহ যুদ্ধের মুখোমুখি হয়েছে বিশ্ব। বর্তমানে ইউক্রেনে চলছে রাশিয়া এবং পশ্চিমা বিশ্বের শক্তির লড়াই। 

গোটা পৃথিবীতে যখন পরাশক্তিগুলোর চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধের ফলে বিশৃঙ্খলা, অশান্তি ও অরাজকতা বিরাজ করছে তখন শান্তি প্রতিষ্ঠায় দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যত নিষ্ক্রিয় দর্শকের ভূমিকা পালন করে আসছে। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ নামক যে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয় সেটি যেন আজ পরাশক্তিদের হাতের পুতুলে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘ তার প্রতিষ্ঠার সময় থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত বিশ্ববাসীর গুরুত্বপূর্ণ কোনো সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসতে পারেনি। পক্ষান্তরে পরাশক্তিগুলো বরাবরই এ প্রতিষ্ঠানকে তাদের নিজ নিজ স্বার্থ সিদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিজয়ী শক্তিগুলোর দ্বারা তাদেরই জাতীয় স্বার্থ রক্ষার্থে গঠিত এ প্রতিষ্ঠানটির সংস্কারের দাবি তাই দীর্ঘদিন ধরে উত্থাপিত হয়ে আসছে। সাথে সাথে ক্ষমতার ভারসাম্যপূর্ণ বণ্টনের দাবিও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহলে তুলে ধরা হচ্ছে। 

বর্তমান বিশ্বে যেসব নেতা বিশ্বব্যবস্থার এসব অসংগতি নিয়ে সরব ভূমিকা পালন করছেন তাদের মধ্যে তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রেজেপ তাইয়্যিপ এরদোয়ান অন্যতম। তিনি দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমা বিশ্বের দ্বিমুখী নীতি, মুসলিম বিশ্বের প্রতি বৈষম্য, পশ্চিমাদের চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধের মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষ হত্যা, মুসলমানদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার, শরণার্থীদের বিরুদ্ধে নিষ্ঠুর আচরণ, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে নীরবতা, পরাশক্তিদের পক্ষে পক্ষপাতিত্বসহ চলমান অন্যায়-অনিয়ম, বৈষম্য ও অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে আসছেন। তিনি আন্তর্জাতিক এসব প্রতিষ্ঠানের সংস্কারের জন্য বিকল্প প্রস্তাব দিয়ে এগুলোকে ঢেলে সাজানোর দাবি করছেন। এ প্রেক্ষাপটে তিনি ‘পৃথিবী পাঁচের চেয়ে বড়’ দাবি করে বর্তমান বৈষম্যপূর্ণ বিশ্বব্যবস্থাকে সংস্কারের মাধ্যমে আরো ন্যায়সংগত একটি বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছেন। এ বইয়ে তিনি ন্যায়ভিত্তিক বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে একটি বাস্তবসম্মত রূপরেখা তুলে ধরেছেন। 

রেজেপ তাইয়্যিপ এরদোয়ান একবিংশ শতকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তিনি মূলত তুর্কিশ ভাষায় বইটি লিখেছেন। এরপর পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ সাতটি ভাষায় এটি অনূদিত হয়েছে। বাংলা ভাষায় বইটি পাঠকের হাতে তুলে দেওয়ার এটি প্রথম প্রয়াস। বইটি মূলত এরদোয়ানের বিভিন্ন সময় দেওয়া বক্তব্যের সারাংশ। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার সংস্কার সম্পর্কিত যেসব দাবিদাওয়া উত্থাপন করে আসছিলেন এ বইটি মূলত তার লিখিত রূপ। এরদোয়ানের অত্যন্ত কঠিন ও প্রজ্ঞাপূর্ণ লেখাকে বাংলা ভাষায় প্রাঞ্জলভাবে পাঠকের কাছে উপস্থাপন করাটাই মূল চ্যালেঞ্জ। 

বইটির বাংলা অনুবাদক মো. জয়নাল আবেদীন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগ থেকে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০১৪ সালে তিনি তুর্কি সরকার কর্তৃক (ফুল ফান্ডেড) বৃত্তির জন্য মনোনীত হন এবং ২০১৯ সালে ইস্তানবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে প্রথম হয়ে পুনরায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি বর্তমানে ইন্তানবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগে পিএইচডি করছেন। আন্তর্জাতিক জার্নালে তার ছয়টি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। লেখক গবেষণা ও অনুবাদের পাশাপাশি নিয়মিত কবিতা লেখেন। তার প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘কান্তার’। 

বই আলোচনা

নতুন পৃথিবীর সন্ধানে : ইনসাফভিত্তিক দুনিয়া বিনির্মাণের রূপরেখা
মূল : রেজেপ তাইয়্যিপ এরদোয়ান
অনুবাদক : মো. জয়নাল আবেদীন

প্রকাশক : সাহিত্যদেশ
প্রথম প্রকাশ : জুন ২০২৩
মূল্য : ৩৫০ টাকা মাত্র 


আলোচক : সাদাত আহমেদ

প্রতিষিদ্ধ/এমএম