শনিবার, এপ্রিল ২৭, ২০২৪
সাঈদীর জানাযায় অস্ত্রধারীদের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের এমপি
সাঈদীর জানাযায় অস্ত্রধারীদের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের এমপি জাফর

সাঈদীর জানাযায় অস্ত্রধারীদের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের এমপি

কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশের সময় : August 19, 2023 | চট্টগ্রাম

কক্সবাজারের চকরিয়ায় জমায়াতের সাবেক নায়েবে আমীর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজা ঘিরে সংঘর্ষের সময় অস্ত্রধারীদের মিছিলের নেতৃত্বে দিয়েছেন কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য জাফর আলম। তার সামনে-পেছনে অন্তত দুজনের হাতে ভারী অস্ত্র দেখা গেছে।

১৮ আগস্ট (শুক্রবার) রাত থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চড়িয়ে পড়া কয়েকটি ভিডিও ও ছবি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সংসদ সদস্য জাফর আলমের মাথায় হেলমেট, সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা পরেছিলেন তিনি। এছাড়া তার সঙ্গে থাকা বেশির ভাগ লোকজনের হাতে লাঠি ছিল।

স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, ১৫ আগস্ট বিকেল ৪টার দিকে সাঈদীর গায়েবানা জানাজা ঘিরে যখন চকরিয়া পৌরসভার নামার চিরিঙ্গার বায়তুশ শরফ সড়কে জামায়াতের কর্মী-সমর্থকরা পুলিশ ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দুটি গাড়িতে ভাঙচুর চালাচ্ছিলেন তখন অন্তত ৬০ থেকে ৭০ জন লোক নিয়ে সংসদ সদস্য জাফর আলম চকরিয়া শহরে উপস্থিত হন। তার সঙ্গে সশস্ত্র অবস্থায় কয়েকজনকে দেখে মানুষ দিগ্বিদিক ছুটোছুটি করতে থাকেন। এসময় একটি মিছিল নিয়ে জাফর আলম বায়তুশ শরফ সড়কের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন। মিছিলের সামনে ছিলেন একজন অস্ত্রধারী, হাঁটতে হাঁটতে তিনি ফাঁকা গুলি ছোড়েন। তার ঠিক পেছনে জাফর আলম ও আরেক অস্ত্রধারীকে হেলমেট পরা অবস্থায় দেখা যায়।

একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সাদা পাঞ্জাবি পরা সংসদ সদস্য জাফরকে মাঝখানে রেখে চকরিয়া শহরের মহাসড়কে মিছিলটি হয়। মিছিলের সামনে হেলমেট পরা হাফহাতা শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা এক ব্যক্তির হাতে ভারী অস্ত্র। এর পেছনে জাফর আলম, তার ব্যক্তিগত সহকারী আমিন চৌধুরী, চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলমগীর ও চকরিয়া পৌরসভা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক আহ্বায়ক জয়নাল হাজারীকে দেখা যায়। জাফর আলম হেলমেট পরলেও আমিন চৌধুরী, আলমগীর ও জয়নাল হাজারীর মাথায় হেলমেট ছিল না। তাদের পাশে কালো পাঞ্জাবি ও হেলমেট পরা আরেকজনকে অস্ত্র হাতে দেখা যায়। মিছিল এগিয়ে যেতে একজনকে অস্ত্র হাতে গুলি করতে দেখা যায়। এসময় স্লোগান দিতে দেখা যায়, ‘চকরিয়ার মাটি জাফর ভাইয়ের ঘাঁটি’ জাফর ভাইয়ের ভয় নেই, রাজপথ ছাড়ি নাই’।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাফরের ঘনিষ্ঠ একজন জানান, এমপি জাফর আলম এবারই প্রথম অস্ত্রধারী নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন এমন নয়, অতীতে বহুবার জামায়াত-বিএনপিকে প্রতিরোধে নিজেও অস্ত্র হাতে নেমেছেন।

একটি সূত্র বলছে, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন করে মাঠের শক্তির জানান দিয়ে অন্য মনোয়নপ্রত্যাশী বা জাফর বিরোধীদের বার্তা দিতে চাচ্ছেন তিনি। মূলত জামায়াত-বিএনপির পাশাপাশি আওয়ামী লীগে জাফর বিরোধীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করায় তার উদ্দেশ্য।

এ প্রসঙ্গে জানতে সংসদ সদস্য জাফর আলমকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

তবে, এমপি জাফর আলমের একান্ত সহকারী আমিনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সরকারি নিষেধ থাকার পরও জামায়াত চকরিয়াকে পরিকল্পিতভাবে অশান্ত করতে চিরিঙ্গা লামারপাড়ায় গায়েবানা জানাজার আয়োজন করে। জানাজা শেষে তারা চকরিয়ায় ব্যাপক ভাঙচুরসহ বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে এমন গোপন সংবাদ ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। সে মতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও প্রস্তুতি নিয়ে রাখে। এমপি সাহেবের নেতৃত্বে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা চকরিয়া পৌর শহরে অবস্থান নেন।

যেখানে ঘটনা ঘটেছে সেই স্থান থেকে নিজেদের অবস্থান অনেক দূরে ছিল দাবি করে তিনি বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের হাতে যেসব অস্ত্রের কথা বলা হচ্ছে সেগুলো লাঠি, অস্ত্র নয়।

নিহত ফোরকান আওয়ামী লীগের সমর্থক দাবি করে আমিনুল বলেন, জামায়াত পরিকল্পিতভাবে জল ঘোলা করার জন্য মিথ্যাচার করেছে। আমরাই নিহতের জানাজাসহ সব ধরনের কার্যক্রম করেছি। তার পরিবারকেও নগদ এক লাখ টাকা সাহায্য করেছেন এমপি জাফর আলম। অথচ জামায়াতের কোনো ভূমিকা ছিল না।

অস্ত্রধারীদের সঙ্গে তার ও সংসদ সদস্যের ছবি প্রসঙ্গে চকরিয়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলমগীর গণমাধ্যমকে জানান, তার নেতৃত্বে গায়েবানা জানাজার দিন মহাসড়কে শান্তি মিছিল করা হয়। মিছিলের অগ্রভাগে ছিলেন সংসদ সদস্যও। তবে যে ছবিটির কথা বলা হচ্ছে, সে ছবি আর শান্তি মিছিলের ছবি এক নয়। অস্ত্রধারীদের বিষয়টি তিনি জানেন না। 

আরো দেখুন: হিফজখানায় বলাৎকারের অভিযোগে ৪ শিক্ষককে পেটালো অভিবাবকরা 

প্রতিষিদ্ধ/কক্সবাজার/এমএ