মানুষের মনের ভাব প্রকাশের প্রধানতম মাধ্যম হচ্ছে ভাষা। আর প্রতিটা মানুষ ই মনের ভাব প্রকাশ করে তার মাতৃভাষায়। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। বাংলা ভাষা বিকাশের ইতিহাস প্রায় ১৩০০ বছরের পুরোনো। বাংলার আদি নিদর্শন হচ্ছে চর্যাপদ। যা ৮ম শতকে বাংলায় রচিত হয়ে ১৮শ শতকে এসে বর্তমান রুপ পরিগ্রহ ধারণ করেছে। বর্তমান বিশ্বে প্রায় ৩৮ থেকে ৪০ কোটি মানুষ রয়েছে বাংলা ভাষাভাষী। মাতৃভাষায় কথা বলা মানুষের জন্মগত অধিকার। যেখানে মাতৃভাষার প্রতি গভীর শ্রদ্ধাবোধ থাকার কথা সেখানে ইংরেজি ও বিদেশি ভাষার দাপটে বাংলা আজ অসহায়, দূষিত ও প্রশ্নবিদ্ধ।
বতর্মান প্রেক্ষাপটে বাংলা ভাষার যথেষ্ট,সুন্দর ও তাৎপর্যপূর্ণ শব্দ থাকার পরও কেবলমাত্র মানুষকে আকৃষ্ট করতে ইংরেজি ও হিন্দিসহ বিভিন্ন বিদেশি শব্দের মিশ্রিত ব্যবহার বাংলার প্রতি অনীহা সৃষ্টি করছে। আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে ইংরেজি ভাষার যথেষ্ট কদর রয়েছে। তাই বলে মাতৃভাষা বাংলা কে উপেক্ষা করে ?... চীন,কোরিয়া, জাপান,জার্মান,তুরস্ক,সুইজারল্যান্ড,ফ্রান্স এবং ইরানসহ আরো অনেকেই নিজেদের ভাষায় জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা করে বিশ্বের বুকে নিজেদের অবস্থানকে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছাতে পারলেও আমরা স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দি পরেও মাতৃভাষা চর্চা না করে নানা অপসংস্কৃতিতে নিমজ্জিত। মাতৃভাষা বাংলার প্রতি অবহেলা ও উদাসীনতা দিনদিন প্রকট আকার ধারণ করছে। অহেতুক বিদেশী শব্দের,ব্যবহার বাংলা ভাষার বিকৃত প্রয়োগ,পণ্যদ্রব্য,বাসাবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এমনকি সন্তানের নামকরণেও বিদেশী শব্দের প্রতি ব্যাপকহারে ঝুকছে একশ্রেণীর মানুষ।
ইংরেজি ও হিন্দির সংমিশ্রণে বাংলা ভাষাকে বিকৃত করার অপচেষ্টা যেন কোনভাবেই থামছে না। এক্ষেত্রে দেশের সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত থেকে শুরু করে গণমাধ্যম,টিভি চ্যনেল,নাটক,সিনেমা, সাহিত্য রচনা,এফ এম রেডিওসহ,সোশ্যাল মিডিয়ায় বিকৃত উচ্চারণ,মিশ্র ভাষার অত্যধিক ব্যবহার,ইংরেজি বর্ণে বাংলা লেখা এবং জোড়া তালি শব্দে কথা বলার যেন নিয়মিত তালিম দেয়া হচ্ছে। এমতাবস্থায় মাতৃভাষার শুদ্ধ উচ্চারণ,চর্চা ও ভাষা বিকৃতি রোধে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া সময়ের দাবী। সেইসাথে শুধু বাংলা নয় বরং এদেশে বসবাসরত সকল আদিবাসীদের মাতৃভাষাগুলোও জীবন্ত রাখতে সংশ্লিষ্ট উচ্চ মহলের জরুরী ব্যবস্থা নেয়ার বিকল্প নেই।
মাহমুদুল হক হাসান
মুক্তমনা কলামিষ্ট